প্রতিটি প্রাণী মরণশীল। প্রতিটি প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এখানে মানুষের যাত্রা শেষ নয়; বরং এখান থেকেই মানুষের যাত্রা শুরু। অনেকের ধারণা, মৃত্যুর পরই সব শেষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মৃত্যুর পর এমন জীবনের শুরু, যার শেষ নেই। সেই জীবনকে উপভোগ্য করতে হলে দুনিয়ার জীবনে মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে।

মানুষ মরে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া মানেই সব শেষ নয়; বরং মহান আল্লাহ তাকে সেখান থেকে আবার পুনরুত্থিত করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদের পুনরায় বের করে আনব।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ৫৫) অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে অবশ্যই তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হবে।

একটি পর্যায় হচ্ছে, বর্তমান জগতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, দ্বিতীয় পর্যায় মৃত্যু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এবং তৃতীয়টি হচ্ছে কিয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত হওয়ার পরের পর্যায়। এ তিনটি পর্যায়ই অতিক্রান্ত হবে এ জমিনের ওপর। জমিন থেকে তাদের শুরু। তারপর মৃত্যুর পর জমিনেই তাদের ঠাঁই। আর যখন সময় হবে তখন এখান থেকেই তাদের পুনরুত্থান ঘটানো হবে। (ইবন কাসির) প্রশ্ন জাগতে পারে, পুনরুত্থান কি আমাদের নিজ নিজ শরীরে হবে, নাকি অন্য কোনোভাবে হবে?

কারণ মৃত্যুর পর মানুষ মাটিতে মিশে যায়। যারা আগুনে পুড়ে মারা যায়, তারা ছাই হয়ে যায়। যাদের কোনো পশু গিলে ফেলেছে অথবা যারা সমুদ্রে মাছের পেটে চলে গিয়েছে, তাদের পুনরুত্থান কিভাবে হবে? এই প্রশ্নের জবাব পবিত্র কোরআনে আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে আমি কখনো তার অস্থি একত্র করব না? হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ৩-৪)

কিয়ামতের দিন মানুষের পুনরুত্থান কেমন হবে, তা একটি হাদিসে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা হাশরের মাঠে পুনরুত্থিত হবে যেমন মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছ। অর্থাৎ খালি পা, অনাবৃত শরীর ও খতনাবিহীন উঠবে। তারপর রাসুল (সা.) কোরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘সে দিন আমি আসমানকে গুটিয়ে নেব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলিল-পত্রাদি।

যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। আমি তা পালন করবই।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪) ওপরের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে মহান আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে তাদের নিজ নিজ শরীরেই আবার পুনরুত্থিত করবেন। তাই আমাদের উচিত আমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে মহান আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চালানো। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।